top of page
  • Black Facebook Icon
  • Black Twitter Icon
  • Black Instagram Icon
Search

যাকাত:অভিজ্ঞতা ও প্রস্তাবনা

  • মো. ইব্রাহিম খলিল
  • Aug 4, 2022
  • 5 min read

Updated: Aug 10, 2022

বাংলাদেশে যাকাতের ব্যবহারিক দিকসমূহ:

বাংলাদেশে যাকাত মুষ্টিমেয় নির্দিষ্ট কিছু কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যাকাত ব্যবস্থাপনায় প্রচলিত যে চর্চাগুলো আমাদের দেশে দেখা যায়:


ree


ক. শিক্ষা কার্যক্রমে যাকাত: বাংলাদেশে যাকাতের অর্থ বিভিন্নভাবে শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যয় করা হয় যথা ১. শিক্ষর্থীদের সারা বছর জীবিকার ব্যবস্থাকরণ ২. মাসিক শিক্ষাবৃত্তি প্রদান ৩. মেধাবৃত্তি প্রদান ৪. কারিগরী প্রশিক্ষণ ৫. এতিম ও দরিদ্রদের ফ্রিতে পড়াশোনা করানো ৬. দুস্থ পরিবারের ছেলে-মেয়েদের সাময়িক শিক্ষা সহায়তা ৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ৭. সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সংক্রান্ত কার্যক্রম ৮. বেকার কিশোর-কিশোরীদের জন্য কারিগরী শিক্ষা ৯. শিক্ষার্থীদের সাময়িক অর্থ প্রদান ইত্যাদি

খ. স্বাবলম্বীকরণ কর্মসূচিতে যাকাত: ১. এককালীন অনুদান প্রদান২. সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ৩. দুঃস্থ পুরুষদের কমংসংস্থান কার্যক্রম ৪. ভিক্ষুক পুণর্বাসন কার্যক্রম ৫. জীবিকা উন্নয়ন কর্মসূচি ৬. মুদারিব উদ্যোক্তা উন্নয়ন কর্মসূচি ৭. দুস্থ মহিলাদের সেলাই মেশিন প্রদান ৮. নওমুসলিম স্বাবলম্বীকরণ কার্যক্রম ইত্যাদি

গ. শিশু বিকাশ কার্যক্রমে যাকাত: ১. জন্ম পালন প্রকল্প ২. কর্মজীবী পথ শিশুদের জন্য বিশ্রাম, শিক্ষা এবং বিনোদন কেন্দ্র ৩. সদ্য ভূমিষ্ট পরিত্যক্ত শিশুদের আশ্রয় কেন্দ্র ৪. প্রাক-প্রথমিক শিক্ষা কর্মসূচি ৫. আহ্ছানিয়া মিশন শিশু নগরী ৬. এতিমখানা পরিচালনা ৬. খাতনা ক্যাম্প ৭. নৈপুণ্য বিকাশ কারিগরি প্রশিক্ষণ ইত্যাদি

ঘ. চিকিৎসা সেবায় যাকাত: বহু আগে থেকেই যাকাতের অর্থে বাংলাদেশে চিকিৎসা কার্যক্রম পদ্ধতি চালু রয়েছে। ১. যাকাত বোর্ড শিশু হাসপাতাল ২. দুঃস্থ-গরীব রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম ৩. হোমিও দাতব্য চিকিৎসালয় পরিচালনা ৪. ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস৫. স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি ৬. বাৎসরিক বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষুধের ব্যবস্থাকরণ৭. ভ্রাম্যমাণ মেডিক্যাল ইউনিট ৮. মোবাইল চিকিৎসা সেবা ইত্যাদি।

ঙ. মানবিক সহায়তায় যাকাত: ১. দুস্থ পরিবারের জন্য রাত্রি নিবাস কেন্দ্র ২. প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণ ও পূনর্বাসন৩. দুস্থ পরিবারের গৃহ মেরামত ও নির্মাণ৪. প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন ৫. যাকাত ভাতা ৬. অনাথ ও গরীব পরিবারের বিবাহ সহায়তা ৭. ইনসানিয়াত জরুরী সহায়তা কর্মসূচি ৮. অসহায় ও দরিদ্রদের বিশেষ সহায়তা প্রদান ৯. দাফন সেবা কার্যক্রম ১০. মৃতদেহ সমাহিত করণ ১১. দরিদ্রদের মাসিক ভাতা ১২. দরিদ্র ভূমিহীন মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য সহায়তা প্রদান ১৩. দরিদ্র ও শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ ১৪. শাড়ি-লুঙ্গি ও পরিধেয়বস্ত্র বিতরণ ১৫. রমাযান ও ঈদ সামগ্রী প্যাকেজ ১৬. নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার ক্রয় করে দেয়া ইত্যাদি

চ. দাওয়াহ কর্মসূচিতে যাকাত: ১. জনসাধারণকে বইপত্র ক্রয় করে দেয়া ২. নৈতিক আধ্যাত্মিক চরিত্র বিকাশ কর্মসূচি ৩. মাদরাসার ছাত্রদের যাকাতের টাকায় কিতাব ক্রয় করে দেয়া ইত্যাদি।



বাংলাদেশে যাকাত ব্যবস্থার পর্যালোচনা ও কার্যকরী পদক্ষেপ:

বাংলাদেশের যাকাতের অর্থ শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা, স্বাবলম্বীকরণ, শিশু বিকাশ, মানবিক সহায়তা ও দাওয়াহ কর্মসূচি এই ছয়টি কর্যক্রমে ব্যবহৃত হচ্ছে। যাকাত ব্যবস্থাপনামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো যে সকল কার্যক্রম হাতে নিয়েছে তা আলাদা বিশেষ কিছু নয়। একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন বা চাহিদা পূরণের জন্য যাকাতের বিধান দেয়া হয়নি; যাকাত ব্যবস্থপনার মূল লক্ষ্য হলো দারিদ্র বিমোচন ও মুসলিম জাতিকে স্বনির্ভরকরণ। উমর (রা.) বক্তব্য থেকে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে যায়, আমর ইবনু দিনার হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, উমর (রা.) বলেছেন : ‘যখন তোমরা যাকাতের সম্পদ দিবেই সচ্ছল করে দাও’। বাংলাদেশে যাকাত গ্রহণের পর কোন ব্যক্তি যাকাতের অর্থে ধনী হয়ে পরবর্তীতে যাকাত প্রদান করেছে তার দৃষ্টান্ত আমার জানা নেই। যাকাত ব্যবস্থাপনামূলক কোন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে এমন কার্য সম্পাদন হয়ে থাকলে বিষয়টি সামনে আনা প্রয়োজন। যাতে করে অন্যান্যরাও তাদের অনুসৃত পদ্ধতিগুলো গ্রহণ করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরণের অবদান রাখতে পারে এবং যাকাতের আসল উদ্দেশ্য হাসিল হয়। যাকাতের অর্থে বাংলাদেশ থেকে দারিদ্রতা কিছুটা হলেও বিমোচিত হলে ইসলামি অর্থ ব্যবস্থার স্বার্থকতা ও সফলতার বিষয়টি পূজিঁবাদিদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া যাবে। তাই বাংলাদেশের যাকাত ব্যবস্থার ধারাবাহিক পর্যালোচনা খুবই জরুরী।

১. শিক্ষা কার্যক্রমে যাকাতের ব্যবহারের কার্যকরী পদক্ষেপ:

বাংলাদেশের শিক্ষা কার্যক্রমে বিচ্ছিন্নভাবে যাকাতের অর্থ ব্যবহার না করে সুপরিকল্পিতভাবে যাকাত ব্যবহৃত হতে পারে। এমন বিচ্ছিন্নভাবে যাকাত প্রদানের ফলে শিক্ষার্থীদের স্বাবলম্বী হওয়ার প্রবনতা দেখা যায় না। শিক্ষার্থীদের মাসিক, সাময়িক বা এককালীন যাকাত দেয়ার ফলে তারা যাকাতের অর্থের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে; দারিদ্রতা কাটিয়ে উঠার মনোভাব তাদের মাঝে তৈরি হয় না। যার ফলে যাকাতপ্রাপ্ত দরিদ্র শিক্ষার্থী এবং নিজ উদ্যোগে অর্থ উপার্জনকারী দরিদ্র শিক্ষার্থীর মাঝে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অনেক দরিদ্র অভাবী শিক্ষার্থীকে দেখেছি যারা অর্থের সংকটে বহু বেলা না খেয়ে পাড় করেছে আবার অনেকেই দারিদ্রতার কারণে লেখা-পড়া ছেড়ে দিয়েছে। অবার অনেক ছাত্র পারিবারিক অভাবের তাড়নায় নিজ স্বপ্ন ভেঙ্গে মাঝ পথে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করে কর্মের সন্ধানে ছুটেছে।

বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের অভাব ও দারিদ্রতার চিত্র বলে বা লিখে শেষ করার নয়। বিভিন্ন সময় সংবাদ পত্রের মাধ্যমে জানা যায় অনেকে ঢাকা মেডিক্যাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের মত স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানে চান্স পাওয়ার পরও ভর্তির টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছে না। কোন দরদী মানুষ হয়তো তার ভর্তির টাকা দিয়ে সহযোগিতা করে ভর্তি করিয়ে দিল। তার মতো আরো অনেকেই আছে তাদের ভর্তি পরবর্তী অবস্থা কি হবে? কে দিবে তাদের অর্থের যোগান? এমন অসংখ্য, অগণিত দরিদ্র শিক্ষার্থীদেরকে কি যাকাত ব্যবস্থার প্রচলিত পদ্ধতিতে খরচ বহন করা সম্ভব? যাকাত ব্যবস্থাপনামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিধি আরো বিস্তৃত করে বাংলাদেশে দক্ষ উদ্যোক্তা তৈরি করে দেশীয় অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনা সম্ভব। এর পূর্বে যাকাত দাতাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করার পাশাপাশি সুন্দর সুন্দর প্রস্তাবনা এবং ফলপ্রসূ কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। কেননা যাকাতদাতাগণই হলেন অর্থের উৎস; তাদের উপর ফরযকৃত যাকাত ব্যক্তিয়ভাবে আদায় করলে যাকাতের হাকীকত কখনোই পূরণ হবে না।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা মাদরাসার পাশে যাকাতের টাকায় মানুষের চাহিদা অনুপাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যেতে পারে। যাকাতের টাকায় গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানগুলোর একেকটি একাধিক দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মালিক বানিয়ে দিলে সে সকল দরিদ্র শিক্ষার্থীরা নিজেদের পড়াশোনার পাশাপাশি নিজস্ব এলাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা করে নিজেদের পড়াশোনার যোগান দিতে পারবে। এ সকল প্রতিষ্ঠানে অন্যান্য দরিদ্র শিক্ষার্থীরাও নিজস্ব ক্যাম্পাসেই খন্ডকালীন কাজ করতে পারবে। একদিকে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা শেষ করার পাশাপাশি কিছু দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রী উদ্যোক্তা হয়ে বিদায় নিবে আবার অনেকেই অর্থ সংকটের দুশ্চিন্তা থেকে রেহাই পাবে। যাকাতের সম্পদ গ্রহীতা দূর্বল অভাবী শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র স্বাচ্ছন্দে পড়াশোনাই করবে না বরং শিক্ষাজীবন শেষ করার মূহুর্তে মোটা অংকের অর্থেও মালিকও হবে। প্রচলিত চাকরির পেছনে দৌড়ানোর পরিবর্তে নিজে কিছু করে জীবন-যাপন করার সাহস হবে; আবার এর মাঝ থেকে অনেকেই বড় ধরণের উদ্যোক্তা হবে। কেননা অনেকের মাঝেই সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে, এ সকল প্রতিভা বিকাশ প্রয়োজন যাকাতদাতাদের যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আমি নিজেও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দেখেছি যারা ধার করে টাকা নিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা করে আজ তারা সফল। কিন্তু যাদের টাকা ধার দেয়ার মত কেউ নেই তাদের অবস্থা কি হবে? এভাবে বাংলাদেশের বড় ক্যাম্পাসগুলোতে গড়ে উঠতে পারে যাকাতের টাকায় ক্ষুদ্র শ্রেণীর উদ্যোক্তা।

শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যাকাতের টাকায় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার একটা নমুনা পেশ করছি। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে ধনী-গরীব সকল শিক্ষার্থীই বই, খাতা, কলম এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করে থাকে। সকল বিভাগের সকল শিক্ষাবর্ষের বই ক্যাম্পাসের আশে পাশে পাওয়া যায় না, যার ফলে শিক্ষার্থীদের অনেক সময় ভোগান্তির শিকার হতে হয়। দরিদ্র শিক্ষার্থীরা যাকাতের অর্থে ক্যাম্পাসের ভিতরে ব্যবসা পরিচালনা করলে উভয় পক্ষই লাভবান হবে। উক্ত ব্যবসায় একাধিক শিক্ষার্থী অংশীদার হতে পারে, একেকজন একেক কাজে নিয়োজিত থাকবে। প্রথমে প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষ পাঠ্য চাহিদা নোট করে শিক্ষার্থীর ফোন নাম্বারসহ লিখে রাখবে। পরবর্তীতে কাঙ্খিত বইগুলো সংগ্রহ করে যেকোন উপায়ে তাদের হাতে পৌছে দিবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ছোট দোকন ভাড়া নিতে পারলে কাজ পরিচালনা অনেকটা সহজ হবে।

এতিমখানা, বক্তব ও এ জাতীয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেখানে দরিদ্র ছোট শিশুরা পড়াশোনা করে সে সকল প্রতিষ্ঠানে যাকাতের টাকায় মুদারাবা পদ্ধতি ব্যবসা পরিচালিত হতে পারে। কেননা ছোট শিশুদের ব্যবসা পরিচালনার সক্ষমতা নেই আবার যাকাতের টাকা তাদের জন্য সরাসরি খরচ করার তুলনায় প্রক্রিয়াকরণ করলে বেশি ফলপ্রসূ হবে।


মো. ইব্রাহিম খলিল

বিএ, এমএ [প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান], দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

এমএ (আল-হাদিস), মাদ্রাসা মোহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, ঢাকা

 
 
 

Comments


Let's Visit

Dhaka | Bangladesh

sNew_JIbon Logo Final nov 24 2022-02.png
Connect with us
SUBSCRIBE

Thanks for submitting!

© 2025 Jeebon-জীবন | All rights reserved

bottom of page